পথে যেতে যেতে পথচারী
- আপলোড সময় : ০৭-০১-২০২৫ ১১:৪৭:০৫ অপরাহ্ন
- আপডেট সময় : ০৭-০১-২০২৫ ১১:৪৭:০৫ অপরাহ্ন
স্বাধীন দেশের নাগরিকের নিজস্ব মতামত ব্যক্ত করা ও স্বাধীনভাবে বেঁচে থাকার নামই গণতন্ত্র। গণতন্ত্র যেমন মানুষের মৌলিক অধিকারকে রক্ষা করে তেমনি অনেক প্রশ্নেরও জন্ম দেয়। গণতন্ত্র সব সময়ই সে ব্যক্তির মূল্য এবং মর্যাদা দান করে ঠিক তা নয়। অনেক সময় গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় মানুষ প্রতারিতও হয়। এডমন্ড বার্ক এ বিষয়ে বলেন, “এ বিষয়ে আমি নিশ্চিত যে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় নাগরিকদের সংখ্যাগুরু সম্প্রদায় সংখ্যালঘুর উপর চরমতর নিষ্ঠুর উৎপীড়ন চালাতে সক্ষম।” এমন আরও গুরুত্বপূর্ণ অনেক মন্তব্য অনেকের রয়েছে। পাশাপাশি এরিস্টটল বলেছেন, “একটি গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থায় সার্বভৌম ক্ষমতা সমগ্র জনগণের হাতে ন্যাস্ত থাকে।” গণতন্ত্রের পক্ষে-বিপক্ষে এমন অনেক মাতমত থাকার পরও আজ অবধি মানুষ তার স্বাধীনচেতা মনোভাবকে অক্ষুণœ রাখার স্বার্থে বেছে নিয়েছে গণতন্ত্রকেই। গণতন্ত্র মানেই সকল ক্ষমতা উৎসকে তৃণমূল পর্যায়ে ভাগ করে দেয়া। এতে থাকে সকল শ্রেণিপেশার নাগরিকদের সমান অংশগ্রহণ।
গণতন্ত্রের বাস্তব রূপ লাভ হয় নির্বাচনের মাধ্যমে। অনেক মনীষী গণতন্ত্রকে উৎসব হিসেবে বর্ণনা করেছেন। যদি তাই হয় তবে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় নির্বাচন হবে এর প্রধান আকর্ষণ। দেশের সকল পেশার মানুষের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ থাকে বলে নির্বাচনে থাকে উৎসবের আমেজ। এ প্রসঙ্গে এইচজিও ওয়েলস যেমনটি বলেন, “গণতন্ত্রের উৎসবের প্রধান আকর্ষণ হচ্ছে নির্বাচন।” নির্বাচনের সাথে ওৎপ্রোতভাবে জড়িয়ে আছে জনগণ। একটি স্বাধীন দেশের সচেতন নাগরিকগণ তাদের সঠিক দায়িত্ববোধের পরিচয় দেন নির্বাচনের মাধ্যমে। তাদের জন্যই যেহেতু নির্বাচন সেহেতু তারা নির্বাচনকে খুবই গুরুত্বের সাথে গ্রহণ করে থাকে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ষোড়শতম প্রেসিডেন্ট (১৮৬১-১৮৬৪) আব্রাহাম লিংকন তার প্রদত্ত গেটিসবার্গ বক্তৃতায় গণতন্ত্র, নির্বাচন ও জনগণের সম্পৃক্ততার বিষয়টি যথাযথই সংজ্ঞায়িত করেছেন। সেই থেকে আ পর্যন্ত দেশে দেশে মানুষ গণতন্ত্রের পূজারি এবং নির্বাচনের জন্য হয়ে থাকে উৎসুক।
নির্বাচনে ভোট গ্রহণ একটি অত্যাবশ্যকীয় বিষয়। ব্যালটের মাধ্যমে প্রদত্ত জনগণের রায় একজন সৎ ও যোগ্য প্রার্থীকে নির্বাচন করে ক্ষমতায় প্রেরণ করে। একটি পদে একাধিক প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। সাধারণ ভোটাররা প্রার্থীদের মধ্য থেকে যোগ্যতম একজনকে বেছে নেন। এখানে ব্যক্তি-মতামতের উপর সরাসরি কোন প্রভাব থাকে না প্রার্থী বা অন্য কারোর।
রাষ্ট্র পরিচালনায় সৎ ও যোগ্য ব্যক্তির খুবই প্রয়োজন। এই সৎ ও যোগ্য ব্যক্তির যথাযথ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন ব্যালটের মাধ্যমেই সম্ভব এবং গ্রহণযোগ্য। একজন ভোটারের উপর প্রার্থীর সরাসরি কোন প্রভাব থাকেনা বলে সকল প্রকার ভয়-ভীতির ঊর্ধ্বে ওঠে ভোটার তার ভোটাধিকার প্রয়োগ করে থাকেন। এটি একটি গোপনীয় বিষয়। এই গোপনীয় বিষয়টিই এক সময় চলে আসে প্রকাশ্যে। তখন অনুমান করা যায় যে, অধিকাংশ ভোটার কাকে বেশি পছন্দ করেন। এভাবে একজন সৎ, দক্ষ ও উপযুক্ত ব্যক্তি যখন ক্ষমতায় আসীন হন তখন তার দ্বারা এলাকা বা রাষ্ট্রের মানুষ অবশ্যই কল্যাণ আশা করতে পারে। তবে সব সময়ই যে এমনটি হবে তা কিন্তু নয়। মানুষ মাত্রই ভালো ও মন্দের সাথে সম্পর্কিত। একজন ভালো মানুষ মন্দও হতে পারেন, আবার হতে পারেন চরম দুর্নীতিগ্রস্ত।
মার্ক টোয়েন এ প্রসঙ্গে যেমনটি বলেন, “প্রতিটি মানুষ চাঁদের মতো, যার একটা অন্ধকার দিকে আছে, যেদিক সে কাউকে দেখাতে চায় না।।” তবে একজন মানুষ তার অন্ধকার দিকটি ইচ্ছা করলেই লুকিয়ে রাখতে পারে না। একটি নির্দিষ্ট মেয়াদে ক্ষমতায় আরোহণ করলে বিভিন্ন কর্মকা-ের মাধ্যমে তা বেরিয়ে আসে জনসমক্ষে। নির্বাচিত প্রার্থী অপরাধ করলে তারও বিধি-ব্যবস্থা রয়েছে। মেয়াদ শেষে আবার তাকে দাঁড়াতে হবে কাঠগড়ায়। জনগণ তখন বিষয়টি পুনর্বিবেচনা করার সুযোগ পাবে। তখন যতই মন ভুলানো প্রচারণা চালানো হোক না কেন তাতে কাজ হয় না। ভোটাররা গোপন ব্যালটের মাধ্যমে তাকে প্রত্যাখ্যান করে নতুন করে নির্বাচন করে অপর একজনকে। এই প্রক্রিয়ায় কোন ব্যক্তি স্বৈরাচারী শাসন ব্যবস্থা কায়েমের সুযোগ পায় না। কেননা তার মনে এই ভয়টা থেকেই যায়। যিনি মনে করেন ক্ষমতা একটি পবিত্র দায়িত্ব পালনের মোক্ষম সুযোগ, তিনি এই ভুল করেন না। তাই দেখা যায়, একজন ব্যক্তি একাধারে একাধিকবার নির্বাচিত হন। আবার কেউ বার বার বিফল হন। এটি ব্যাপক আকারে জনগণের একটি বিষয়।
নির্বাচন নিয়ে কথা ওঠলে বাংলাদেশের নির্বাচনের কথা বলতেই হয়। আওয়ামী লীগ সরকার ২০১৪ সালের নির্বাচন করেছে বিরোধী দল ছাড়াই। পরবর্তীতে এ বিষয়ে কথা ওঠলে তারা ভোল পাল্টে নির্বাচন করে বিরোধী দলের অংশগ্রহণে। কিন্তু নিজেদের দুর্বলতার কথা বুঝতে পেরে তারা দিনের ভোট রাতেই সম্পন্ন করে এবং নিজেদের বিজয়ী বলে ফলাও করে প্রচার করে। দেশের মানুষকে বোকা বানিয়ে ফেলে। ২০২৪ সালে সম্পূর্ণ নতুন কৌশল অবলম্বন করে অর্থাৎ ‘আমি-ডামি-মামী’। নিজেরাই নিজেদের প্রতিদ্বন্দ্বী। সরকারি দল বিরোধী দল একাকার। এই ছিল শেখ হাসিনার নির্বাচন।
নিউজটি আপডেট করেছেন : SunamKantha
কমেন্ট বক্স
সর্বশেষ সংবাদ